জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ‘স্থায়ী মানবাধিকার সংকট’ সৃষ্টির জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

দুই বছর আগে মিয়ানমার জান্তা ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিক্ষোভকারীরা। রক্তক্ষয়ী আন্দোলন, সংঘাত, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলছেই। বিক্ষোভে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। জান্তা সরকারের ওপর নতুন করে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হয়েছে।

২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে শুক্রবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তাতে দেখা গেছে যে, সেনাবাহিনী নির্বিচারে বিমান হামলা এবং কামানের গোলাবর্ষণ , গ্রামগুলোতে আগুন দেওয়ার কারণে বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। ফলে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব মিয়ানমারে সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীরা যে কৌশল ব্যবহার করেছে তাতে সরকারের অধীন নয় এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে খাদ্য, অর্থ, গোয়েন্দা তথ্য এবং দল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করতে নকশা করা হয়েছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ক্রমাগত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা এবং নীতির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের অবসান ঘটানো জরুরি এবং দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজন।’

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল করলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এর আগে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী বলেছিল, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। দেশে কোনো রকম নৃশংতা চলার কথা অস্বীকার করে তারা বলেছিল, কেবল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযান চালানো হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মায়ানমার দলের প্রধান জেমস রোডহেভার জানিয়েছেন, দেশের প্রায় ৭৭ শতাংশ অংশে সশস্ত্র সংঘর্ষ হচ্ছে।

জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো সময় ও পরিস্থিতি এর আগে কখনোই আসেনি যেখানে, মিয়ানমারের সংকট এতদূর গেছে বা পুরো দেশে ছড়িয়ে গেছে।’ তার সুপারিশে, প্রতিবেদনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং বিরোধীদের নিপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই সংকটের অবসান ঘটাতে পারে এমন সংলাপের সুযোগ দেওয়ার জন্য সামরিক অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

রাকিব/এখন সময়